শ্রীকান্ত

  শ্রীকান্ত
  শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮)

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম লেখকদের অন্যতম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- এর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি "শ্রীকান্ত"। এই বইটি শরৎচন্দ্রের জীবনচরিতমূলক উপন্যাস। শ্রীকান্তের ৪ টি খণ্ড যথাক্রমে- ১৯১৭, ১৯১৮,১৯২৭ এবং ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথম তিনটি খণ্ড ভারতবর্ষ  পত্রিকায়, সর্বশেষ পর্ব বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে পুস্তকাকারে প্রত্যেকটি খণ্ডই প্রকাশিত হয়।

এই বইয়ে চরিত্র আছে অনেক, কিন্তু সব চরিত্রের ব্যাপ্তি যথেষ্ট নয়। উল্লেখযোগ্য চরিত্রসমূহের বিবরণ নিম্নরূপ :

শ্রীকান্ত - শ্রীকান্ত বাংলা উপন্যাসের প্রথম প্রকৃত 'আমি' বা উত্তমপুরুষ। তার বয়ানেই সমগ্র উপন্যাস বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি খণ্ডই মূলত শ্রীকান্তের আত্নকথন। 

ইন্দ্রনাথ - যার কাছ থেকে সর্বপ্রথম 'ভবঘুরে' হবার নেশা শ্রীকান্তের মাথায় চেপেছিলো, সে-ই ইন্দ্র। শ্রীকান্তের প্রিয় বন্ধু- অকুতোভয়, অসাধারণ মানসিকতার অধিকারী এবং ধার্মিক। 

অন্নদা দিদি- এক দরিদ্র সাপুড়ে পত্নী, যাকে শ্রীকান্ত  ভীষণরকম শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে এবং ইন্দ্রের মাধ্যমেই তাদের পরিচয় হয়। শ্রীকান্তের সমগ্রজীবনে নারী বিষয়ক সকল ভাবনায় অন্নদা দিদির প্রভাব অনেক। 

নতুনদা - ইন্দ্রের মাসতুত ভাই, কলকাতায় পড়াশোনা করেন। শহুরে ও শিক্ষিত হবার দেমাক তারমধ্যে প্রকট।

রাজলক্ষ্মী/পিয়ারী বাইজি - রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তের একমাত্র প্রেমিকা। শ্রীকান্তের জীবনে অসংখ্য নারী চরিত্র হানা দিলেও, তার সমস্ত জীবন রাজলক্ষ্মীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। 
রাজলক্ষ্মী পূণ্যবতী, গুণবতী, বুদ্ধিমতী রমণী। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে জীবনের কিছু সময় বাইজি হয়ে কাটাতে হয়েছে এবং তার এই অনিচ্ছাকৃত পাপকর্মের কালিমা মুছে ফেলতে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

অভয়া - চাকরির উদ্দেশ্যে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার)  যাবার সময় লঞ্চে শ্রীকান্তের সাথে পরিচয় হয় এক অসাধারণ নারীর। যে সমাজের চেয়ে চিন্তা চেতনায় অনেক অগ্রসর এবং আত্নসম্মানে টইটুম্বুর।

রোহিণীবাবু - অভয়ার সঙ্গী। লঞ্চে এবং পরবর্তী জীবনেরও।

বজ্রানন্দ - ডাক্তারি পড়া শেষ করে সেই বিদ্যা জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহারের নিমিত্তে সন্যাসী হয়ে যাওয়া এক তরুণ। রাজলক্ষ্মীর পাতানো ভাই, যার আবির্ভাব তৃতীয় খণ্ডে।

সুনন্দা - জ্ঞানী, তেজী নারী। দম্ভ তার নেই, কিন্তু সমস্যা সমাধানে সমঝোতার চেয়ে বিদ্রোহের প্রতি ঝোঁক বেশি।

গহর - শ্রীকান্তের এক মুসলিম কবি বন্ধু। কিছুটা বৈরাগী ধাঁচের এবং বড় মনের অধিকারী।

কমললতা - দুঃখ লুকিয়ে বৈরাগ্যে বেঁচে থাকবার আপ্রাণ চেষ্টা করা তরুণী। 

কাহিনী-সংক্ষেপ :
শ্রীকান্ত কোনো নির্দিষ্ট কাহিনী নয়, বহু বিচ্ছিন্ন/অবিচ্ছিন্ন ঘটনা-সম্বলিত জীবনের গল্প। যার পুরোটা জুড়ে অসংখ্য চরিত্রের আনাগোনা। 

শ্রীকান্ত জীবনের প্রত্যেকভাগে বিভিন্ন চরিত্রের কাছ থেকে নানারকম অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। তবে এত্তসব চরিত্র ও ঘটনার বাহুল্যের মধ্যেও উপন্যাসের মূলসূত্র রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তের প্রণয়কাহিনী শেষ অবধি প্রবাহিত হয়েছে।

কৈশোরে শ্রীকান্ত ইন্দ্রনাথ নামক অসাধারণ বালকের সংস্পর্শে এসে - মুক্তভাবে চলবার স্বাদ পায় এবং ধর্মমানা ও জাতভেদ যে একই ব্যাপার নয় তাও জানতে পারে। ইন্দ্রের সাথে রাতবিরেতে নৌভ্রমণ ছিল শ্রীকান্তের কৈশোর জীবনের সেরা এডভেঞ্চার। সেসময়েই, ইন্দ্রের মুখে শুনতে পাওয়া অসাধারণ এক বাক্য, "মড়ার আবার জাত কীরে?" শ্রীকান্তের মনে গভীর দাগ কেটে যায়।
ইন্দ্রের মাধ্যমেই তার পরিচয় হয় অন্নদা দিদির সাথে।  হিন্দুঘরের মেয়ে হয়েও যে এক ধোঁকাবাজ মুসলিম সাপুড়ের পত্নী। একসময় শ্রীকান্ত জানতে পারে, অন্নদা দিদি সম্পন্ন হিন্দু পরিবারের মেয়ে এবং তার স্বামী পূর্বে হিন্দুই ছিল। কিন্তু তার স্বামী তাকে পিতৃগৃহে রেখে নিরুদ্দেশ হয়। পরবর্তীতে যখন তার দেখা মেলে, ততদিনে ধর্মান্তরিত হয়ে ভবঘুরে এক মুসলিম সাপুড়ে হয়েছে সে। নিজের স্বামীকে এই অবস্থায় দেখেও অন্নদা দিদি ছুটে চলে আসে। ঘরবাড়ি ছেড়ে ধর্মান্তরিত সাপুড়ে স্বামীকে নিয়েই গ্রাম থেকে দূরে নির্জন এলাকায় ঘর বানিয়ে থাকে এবং পাড়ায় পাড়ায় সাপখেলা দেখিয়ে বেড়ায়। অথচ তার নিজের এলাকায় হয়তবা সে কুলটা বলে পরিচিত! অন্নদা দিদির সাথে ইহজনমে শ্রীকান্তের আর কখনোই দেখা হয় নি, তবে তার সেই দিদিকে সে মনে ভীষণ উচ্চ আসনে স্থান দেয়। সে তখন থেকেই ভেবে রাখে, আর কখনো কোনো নারীর জীবনের গল্প তার নিজের মুখ থেকে না শুনে বিচার করতে যাবে না। 

ইন্দ্রের মাধ্যমে আরো একজনের সাথে পরিচয় হয় শ্রীকান্তের, তার নাম নতুনদা। কলকাতায় পড়াশোনা করা এক দাম্ভিক তরুণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলেই যে মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হয় না, তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

তরুণ বয়সে এক রাজকুমারের আমন্ত্রণে শিকারে যায় শ্রীকান্ত, সেখানেই দেখা মেলে পিয়ারী বাইজির। তার সাথে মান-অভিমানের খেলা হয় অনেকবার। পরে জানা যায়, পিয়ারী বাইজি তার ছেলেবেলার খেলার সাথী রাজলক্ষ্মী; শ্রীকান্ত এবং তাদের গ্রামের সকলে যাকে মৃত বলে জানে। রাজলক্ষ্মীর বাইজি হওয়া তাকে যতটা না আলোড়িত করে- তার চেয়ে বেশি আলোড়িত হয় সে বাল্যকাল থেকে রাজলক্ষ্মীর মনে পুষে রাখা প্রেমের সন্ধান পেয়ে। 

তার অল্পকিছুদিন পর থেকেই রাজলক্ষ্মী তার বাইজি পরিচয় ছেড়ে আসে। কিন্তু সমাজ কি আর এত সহজে নারীকে ভুল শুধরানোর সুযোগ দেয়? সে সুযোগ রাজলক্ষ্মী আজীবনই হাতরে বেড়িয়েছে। 
রাজলক্ষীর থেকে পালানোর চেষ্টা শ্রীকান্ত কম করেনি, প্রতিবারই বাঁধা পড়তে হয়েছে। একবার রাজলক্ষীর থেকে মুক্তি পেতে সে চাকরির নাম করে বার্মায় পারি জমায়। যাত্রাপথে তার পরিচয় হয় অভয়া এবং রোহিণীবাবুর সাথে। অভয়ার স্বামী বার্মায় থাকে, সে বহুদিন ধরে স্বামীর খোঁজ না পেয়ে পাড়াতুতো দাদা রোহিণীবাবুকে সাথে নিয়ে বার্মায় যাচ্ছিলো  স্বামীকে খুঁজতে। রোহিণীবাবু অসুস্থ হওয়ায় একরকম শ্রীকান্তের ঘাড়ে চেপেই বার্মায় পৌছায় অভয়া। লঞ্চে এক ডাক্তারবাবু অভয়া সম্পর্কে বাজে ইংগিত করে, তা ঠিক রুচিকর ঠেকেনা শ্রীকান্তের। পরবর্তীতে অভয়ার স্বামীর সাথেও পরিচয় হয় শ্রীকান্তের, কুরুচিপসম্পন্ন এক সুবিধাবাদী পুরুষ; বার্মায় এসে বার্মিজ মেয়ে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। তাকে কোনোভাবেই অভয়ার যোগ্য বলে গ্রহণ করতে পারেনি শ্রীকান্ত। অভয়া তবুও স্বামীর সংসারে যাবার চেষ্টা করে এবং পুনঃরায় নির্যাতিত হয়। সাহসী অভয়া মুখ থুবড়ে পড়ে না থেকে, রোহিণীবাবুর সাথে সংসার শুরু করবার সিদ্ধান্ত নেয়। সামাজিকভাবে বৈধ সম্পর্ক তাদের না থাকলেও, আত্নিক বন্ধন যথেষ্টই দৃঢ়। তাদের এই সম্পর্ক শ্রীকান্ত ঠিক মানতেও পারেনি আবার অসম্মান করার ধৃষ্টতা সে দেখাতে পারেনি। অভয়ার মাঝেও শ্রীকান্ত অন্নদা দিদিকে খুঁজে পায়। 

বার্মায় গিয়ে শ্রীকান্ত জাতিভেদ এবং নারী স্বাধীনতা নিয়েও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। তৎকালীন সাধারণ বাঙালির বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতা ফুটে ওঠে এখানটায়। অনেক ব্যাপারে লিবারেল চিন্তা করতে গিয়েও সে আটকে গেছে, সংস্কার তাকে আটকে দিয়েছে। তবে জাতিতে ভেদাভেদ না থাকা কিংবা নারীর অবাধ বিচরণ তাকে যথেষ্টই অভিভূত করেছিলো।

বার্মা থেকে রাজলক্ষ্ণীর ডাকে শ্রীকান্ত আবার ছুটে আসে। শ্রীকান্তের অসুস্থতার নাম করে রাজলক্ষ্মী তাকে এক অজপাড়া গাঁয়ে নিয়ে চলে যায়। যাত্রাপথে জুটে এক সন্নাসী, বজ্রানন্দ। বয়সে একেবারে তরুণ এই শিক্ষিত সন্নাসীকে গৃহে ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করে রাজলক্ষ্ণী। কিন্তু এই বজ্রানন্দ যে অন্য ধাতুতে গড়া! গোটা দেশই তার গৃহ, জাতপাত নির্বিশেষে সকলে তার পরিবারের সদস্য, সকলের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে সে বদ্ধপরিকর।

তারপরে দেখা মেলে এক সাহসী, শিক্ষিত তরুণী সুনন্দার। সে ছিল এক সম্পন্ন গৃহস্থবাড়ির ঘরনি, কিন্তু তাদের সম্পদের পেছনে এক তাঁতি পরিবারের দুর্দশার কাহিনী জানতে পেরে আর এক মূহুর্ত দেরী না করে স্বামীকে সঙ্গে করে সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। তারপর হতদরিদ্রের মত জীবন বেছে নেয় । দুই-তিনজন ব্রাক্ষ্মণকে পড়ানোর ও থাকাখাওয়ার দ্বায়িত্বও সে নেয়। তবে তার চরিত্রের ত্রুটি হল- তার তেজস্বীতার দরুণ, স্থিরচিত্তে সমস্যা সমাধানের পথ সে জানেনা। সুনন্দার জা তেমন শিক্ষিত না হলেও, বড় মনের অধিকারী। সুনন্দা ও তার স্বামীর দুঃখে ভীষণ ব্যাথিত হয়ে নিজ উদ্যোগেই সমস্ত সমস্যার মীমাংসা করে সুনন্দাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সে। 

রাজলক্ষ্মী সুনন্দার কাছ থেকে শাস্ত্রীয় শিক্ষা নিয়ে পূণ্যলাভে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, শ্রীকান্তের প্রতি তার খেয়াল থাকে না। শ্রীকান্ত অভিমান করে আবার ভবঘুরে হবার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় তার দেখা হয় তার বাল্যবন্ধু গহরের সাথে। গহর এক ধনী মুসলিম পরিবারের ছেলে, যার পরিবারের একমাত্র সদস্য এখন সে-ই, বাকী সবাই মৃত। সম্পত্তিতে তার লোভ নেই, তার অঢেল সম্পত্তি বিলিয়ে দেয়াতেই আনন্দ। প্রকৃতি দেখার চোখ থাকে যার, তাকে পার্থিব বিষয়  আকর্ষণ করবে কি করে? তার ছেলেবেলা থেকে সাধ কৃত্তিবাসের চেয়ে ভালো রামায়ণ লিখে যাওয়া এবং সারাজীবন তার যথাসাধ্য চেষ্টা সে করে গিয়েছে। শ্রীকান্ত ব্রাক্ষ্মণ হয়েও, গহরের সাথে থাকতে বা খেতে অস্বস্তি প্রকাশের সুযোগ পায় না মন থেকে। কেননা গহরের মত উদার মন যার, জাতের বা দুনিয়ার ধার সে ধারে না, এইসব ছোটখাটো ব্যাপার ভাববার সময়ই নেই তার। 
গহর এক বৈষ্ণব দলের কাছে গিয়ে দিনরাত বসে থাকতো। সেই বৈষ্ণব দল বাস করে আধ্যাত্মিকতার জগতে, ঠাকুরের সেবা করে যাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। সেইদলের মেয়েদের প্রধান, বৈষ্ণবী কমললতার প্রতি গহরের গভীর প্রেম। কমললতা তা জানে, কিন্তু বৈষ্ণবী কমললতা চাইলেই কি মুসলিম গহরের সাথে জড়াতে পারে? কমললতা বরং শ্রীকান্তকে ভালোবেসে একবার এই বৈষ্ণব জীবন থেকে পালিয়ে ভবঘুরে হবার চিন্তা করেছিলো। কমললতারও আছে নারী জীবনের দুঃখের গল্প। অল্পবয়সে স্বামী মারা যায় তার, পরবর্তীতে এক ধনী ব্যাক্তির দ্বারা ধর্ষিত হয়, যার সাথে তার বিয়েও হয়, কিন্তু ধর্ষনের দায় নিয়ে আত্নহত্যা করে তাদের বাড়িতে থেকে বড় হওয়া এক ভাই- যে কিনা মরে গিয়ে তার দিদির পাপমোচন করতে চেয়েছিল -পারেনি। এত কষ্ট সইতে না পেরে বৈরাগ্যে সুখ খুঁজতে এসেছিলো সে। গহরের মৃত্যুশয্যায় সেবা করেছিলো সে, সেই দোষে বৈষ্ণবের দলও তাকে তাড়িয়ে দেয়, গহরকেও সে বাঁচাতে পারেনি।

রাজলক্ষ্মীর গল্পটা এইবারে সংক্ষেপে জানানো উচিত। অল্পবয়সে তার কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা, রাজলক্ষ্মী ও তার বোনকে এক বৃদ্ধ ব্যাক্তির সাথে বিয়ে দেয়, যে কিনা অল্পদিনেই মারা যায়। অভাবের তাড়নায়, রাজলক্ষ্মীকে তার মা কাশীতে নিয়ে এক ধনী লোকের কাছে বিক্রি করে দেয় এবং গ্রামের সবাইকে জানায় সে মারা গেছে। রাজলক্ষ্মী বাইজি হিসেবে অল্পবিস্তর আয় করবার পরই, তা দিয়ে দোকানপাট কিনে অর্থ উপার্জনের পথ তৈরী করে এবং বাইজির কাজ ছেড়ে দেয়। সে মানবসেবা, শাস্ত্র শিক্ষা সবকিছু দিয়ে বাইজি পরিচয় ধুয়ে মুছে ফেলবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শ্রীকান্ত ঠিক পেরে উঠে না রাজলক্ষ্মীকে বিয়ে করবার সাহস যোগাতে, আবার তার দুর্নিবার আকর্ষণ ছেড়ে বেড়িয়ে যাবার সামর্থ্যও তার নেই।  তবে উপন্যাসের শেষে এসে, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তের প্রণয় একরকম পরিণতি পায়। শরৎ তার 'নারীর মূল্য' প্রবন্ধে বলেছেন, "একনিষ্ঠ প্রেম ও সতীত্ব যে ঠিক একই বস্তু নয়, এ-কথা সাহিত্যের মধ্যেই যদি স্থান না পায়- এ সত্য বেঁচে থাকবে কোথায়? " 
আরো অনেক ছোটখাটো ঘটনার দ্বারা শ্রীকান্ত দেশের দুঃখ-দুর্দশার গল্প বলে গেছে। শ্রীকান্ত কোনোকিছুরই ঠিক সমাধানে পৌছুতে পারেনি, কিন্তু অনেক ব্যাপারে প্রশ্ন রেখে গেছে, ভাবতে শিখিয়েছে।  
জাতিভেদের আদৌ দরকার আছে কি? নারীদের আমরা অবমূল্যায়ন করছি কিনা? এই সমাজ কি সব ঠিক বলে? প্রাচীন মনীষীদের সব কথাই কি সঠিক? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই কি প্রকৃত শিক্ষা? এইরকম আরো হাজারটা প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসিত রেখেই শেষ হয় শ্রীকান্তের উপাখ্যান। 













Comments

Popular posts from this blog

অপরিচিতা