বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ



বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

কবিঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন একজিন বিখ্যাত কবি। বাংলার চতুর্দশপদী কবিতা ও সনেটের প্রত্যাবর্তক তিনি। তিনি বাংলা কবিতার অমৃতাক্ষর সনেট নিয়ে আসেন। তার কয়েকটি কাব্যগ্রন্থরের মধ্যে ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ মহাকাব্য হিসেবে পরিচিত। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ ‘ উক্ত কবিতার একটি অংশ।

“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতাটি সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সবার আগে কিছু চরিত্রের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার। এই কবিতার উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো হচ্ছে :

রাঘবঃ রঘুবংশের শ্রেষ্ঠসন্তান। এখানে রামকে বোঝানো হয়েছে।

অরিন্দমঃ অরিকে দমন করে যে।এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে। ইনি হলেন রাবণপুত্র।

মেঘনাদ

কুম্ভকর্ণঃ রাবণের মধ্যম সহোদর।

বিভীষণঃ ইনি রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর ।রাম-রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকার। রামেরভক্ত।

 লক্ষ্ণনঃ ইনি হলেন রামের অনুজ। সুমিত্রার গর্ভজাত সন্তান বলে লক্ষনকে সৌমিত্র বলা হয়ে থাকে।

রাবনঃ ইনি হলেন লঙ্কার অধিপতি। মেঘনাদ ও বীরবাহুর পিতা। কুম্ভকর্ণ ও বিভিষনের বড় ভাই।

“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধু সূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ-কাব্যের’, ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে।

সর্বমোট নয়টি সর্গে লক্ষ্ণনের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসীবীর মেঘনাদের। এই কাব্যাংশটি ১৪ মাত্রার অমিল প্রবাহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রথম পঙক্তির সাথে দ্বিতীয় পঙক্তিরচরনের শেষে মিলহীনতার কারনে এ ছন্দ ‘অমিত্রাক্ষরছন্দ’ নামে পরিচিত।

রামচন্দ্র লঙ্কারাজ্যে আক্রমণ করলে লঙ্কার রাজা রাবন তাদের দৈবশক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। তার ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রাবন মেঘনাদকে তাদের দলের সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ করেন। যুদ্ধ যাত্রার আগে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পুজা করার জন্য মনস্থির করে। ঠিক সেই সময় মেঘনাদ দেখে তার সামনে রামানুজ লক্ষন।লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে।

ইতোমধ্যে লক্ষ্মন মেঘনাদের দিকে তলোয়ার তুলে ধরলে মেঘনাদ লক্ষ্মনের কাছে যুদ্ধ সাজের জন্য সময় প্রার্থনা করলে লক্ষ্মণ তাকে সময় না দিয়েই আক্রমণ করে। ঠিক সেই সময় মেঘনাদের চোখ পড়ে যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বার এর দিকে তখনই দেখতে পাই রাবনের অনুজ তার কাকা শ্রী বিভীষণকে।সেই সময়ই তার কাছে সব স্পষ্ট হয়ে যায় তিনি বুঝতে পারেন মায়াদেবীর আনুকুল্যে ও রাবণের অনুজ বিভীষনের সহায়তায় লক্ষ্মন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে।মায়াবলে শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্মন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে।

বিভীষণ দেশদ্রোহীর মতো তার নিজের ভাই ও ভাইয়ের পুত্র শুধু না তার দেশের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এখানে মেঘনাদ তার কাকাশ্রীকে উদ্দেশ্য করে অবজ্ঞার সুরে বলে ‘হায়, তাত,উচিত কি তব এই কাজ’।

এইখানে বিভীষণের প্রতি তার দেশদ্রোহীতার জন্য ঘৃনা ও বিস্ময় প্রকাশ পেয়েছে এই জন্য যে সে নিকষাপুত্র (রাবন,বিভিষন,কুম্ভকর্ণর মাতা) হয়ে, রাবন ও কুম্ভকর্ণর ভাই হয়েও তার নিজের কাকা হয়ে শত্রুদের সাহায্য করলো তার নিজের ভাইয়ের পুত্রের বধ করার জন্য। মেঘনাদ বিভিন্নভাবে তার কাকা শ্রী কে ধিক্কার জানায়।

মধুসূদন দত্ত বাল্মিকী-রামায়নকে নবমূল্য দান করেছে এ কাব্যে। তার এই কাব্যে রাম লক্ষ্মণ হীনরুপে এবং তার পুত্র মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুনের ধারকরূপে উপস্থাপিত। পুরানের রাক্ষসরাজ রাবন ও তার পুত্রের প্রতিই মধুসূদন দত্তের মমতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

শ্রীকান্ত

অপরিচিতা