King Lear
নাম : কিং লিয়ার
লেখক : উইলিয়াম শেক্সপীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
ধরন : ট্রাজেডি
চরিত্র : লিয়ার ( ইংল্যান্ডের রাজা)
গনেরিল (লিয়ারের বড় মেয়ে)
ডিউক অব অ্যালবেনি (গনেরিলের স্বামী )
অসওয়াল্ড ( গনেরিলের কর্মচারী)
রিগ্যান (লিয়ারের মেজো মেয়ে)
ডিউক অব কর্নওয়াল (রিগ্যানের স্বামী)
কর্ডেলিয়া (লিয়ারের ছোট মেয়ে)
ফ্রান্সের রাজা( কর্ডেলিয়ার স্বামী)
কেন্ট ( লিয়ারের বিশ্বস্ত সহচর)
গ্লস্টার ( গ্লস্টারের অধিপতি)
এডগার ( গ্লস্টারের বৈধ পুত্র)
এডমন্ড ( গ্লস্টারের অবৈধ পুত্র)
কাহিনী সারসংক্ষেপ : নাটকের মূল চরিত্র কিং লিয়ারের নামানুসারে নাটকটির নামকরন করা হয়েছে। লিয়ার ইংল্যান্ডের রাজা। বুড়ো বয়সে তিনি দেশ শাসনের দায়ভার তার মেয়েদের উপর দিয়ে নিজে মুক্ত হতে চাইলেন। তিনি তার রাজ্যকে তিনভাগে ভাগ করার আগে তার মেয়েরা তাকে কতটা ভালোবাসে সেটা জানতে চাইলেন।
তিনি যথাক্রমে বড় মেয়ে এবং মেজো মেয়ের উত্তরে সন্তুষ্ট হলেন এবং তাদের উপযুক্ত পরিমান সম্পদ দিয়ে দিলেন। এবার তিনি ছোট মেয়ের কাছে জানতে চাইলে ছোট মেয়ে জানায় সে বাবাকে ভালোবাসে তবে স্বাভাবিকতার বাইরে নয়। বিয়ের পর তার ভালোবাসা ও যত্নের অর্ধেক প্রাপ্য তার স্বামীও। সবটুকু ভালোবাসা সে তার বাবাকে দিতে পারবে না। তার এহেন মন্তব্য শুনে রাজা কর্ডেলিয়াকে প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেন। কেনন্ট রাজাকে বাধা দিতে আসলে তিনি কেন্টকেও রাজ্য থেকে বিতাড়িত করলেন।
কর্ডেলিয়ার স্বামীত্বের দাবীদার ফ্রান্স এবং বারগান্ডির রাজা গ্লস্টারের অধিপতির সঙ্গে আসেন। রাজা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন তাদের মধ্যে কেও নিঃস্ব রাজকন্যাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিনা। বারগান্ডির রাজা অস্বীকার করলেন। তবে ফ্রান্সের রাজা, কর্ডেলিয়ার চারিত্রিক গুনাবলীতে মুগ্ধ হয়ে কর্ডেলিয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করে নিয়ে তার রাজ্যে চলে যান।
লিয়ার তার সম্পত্তি বড় ও মেজো মেয়ের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে শর্ত দিলেন তিনি এক এক মাস করে দুই মেয়ের কাছে থাকবেন। সাথে থাকবে একশ নাইট এবং মেয়ে জামাইরাই তাদের খরচ বহন করবেন। সাথে তার রাজা উপাধি ও বজায় থাকবে।
লিয়ার প্রথমে গনেরিলের কাছে অ্যালবেনির প্রাসাদে এসে রইলো।কিন্তু গনেরিল সেটা পছন্দ করছিলো না। সে তার কর্মচারী অসওয়াল্ডকে নির্দেশ দেয় রাজা ও তার নাইটদের উপেক্ষা করতে। এদিকে ছদ্মবেশে কেন্ট অ্যালবেনির প্রাসাদে আসে প্রভু লিয়ারের সেবা করতে। লিয়ার গনেরিলের কথায় এবং আচরনে রাগে উন্মত্ত হয়ে রিগ্যানের প্রাসাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। অ্যালবেনি লিয়ারকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও লিয়ার থামে না। রিগ্যান ও তার দিদির মত বাবার দেখাশুনা করতে নারাজ। তাই সে গ্লস্টারের প্রাসাদে যায় পরামর্শ নিতে।
ওদিকে গ্লস্টারের অবৈধ পুত্র এডমন্ড বৈধ পুত্র এডগারের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এডগারের প্রতি গ্লস্টারের মন বিষিয়ে দেয় এবং ফলস্বরূপ গ্লস্টার এডগারকে শাস্তি দিতে চান। এডগার পালিয়ে যায়। সে ভিক্ষুকের পোশাক পড়ে পাগলের মত ছন্নছাড়া হয়ে লুকিয়ে বাচে।
রিগ্যান গ্লস্টারের প্রাসাদে আসার পর লিয়ার ও তার দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। এবং মেজো মেয়ের কাছেও বিশ্বাসঘাতকতা পেয়ে রাগে দুঃখে প্রবল ঝড়ের মধ্যেই দূর্গ ছেড়ে বেড়িয়ে যান। কেন্ট কর্ডেলিয়াকে সংবাদ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এবং দুর্যোগের হাত থেকে বাচতে তারা এক কুটিরের ভিতরে আস্রয় নেয় যে কুটিরে এডগার পাগল বেশে টম সেজে আস্রয় নিয়েছিলো।
ওদিকে এসব দেখে গ্লস্টার অপরাধবোধে ভোগে এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি কর্নওয়ালের আদেশ উপেক্ষা করে গোপনে রাজার খোজে বের হবেন। এদিকে এডমন্ড তার বাবার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কর্নওয়ালের সন্দেহ এবং রাগ বাড়িয়ে দেয়। কর্নওয়ালের আদেশে দুইতিনজন লোক গ্লস্টারকে ধরে নিয়ে আসে। এবং জেরার এক পর্যায়ে গ্লস্টারের এক ভৃত্য গ্লস্টারকে বাচাতে কর্নওয়ালকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে ভালো রকম জখম করে। এই আঘাতের কারণে পরবর্তীতে কর্নওয়ালের মৃত্যু হয়। রিগ্যান তখন সেই ভৃত্যকে হত্যা করে এবং গ্লস্টারের দুইচোখ উপরে ফেলে। গ্লস্টার সেইসময় এডমন্ডের বিশ্বাসঘাতকতা জানতে পারে। গ্লস্টারকে দূর্গের বাইরে বের করে দেয়া হয়। একপর্যায়ে গ্লস্টার পাগলবেশী এডগারের সহায়তায় ডোভারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
অ্যালবনির প্রাসাদে আসে গনেরিল ও এডমন্ড। এসে বুঝতে পারে অ্যালবেনি তাদের কাজকর্মে একমত না। বরং সে তাদের বিরুদ্ধে। তখন গনেরিল এডমন্ডকে কর্নওয়ালের কাছে ফিরে যেতে বলে। এরপর এডমন্ড চলে গেলে গনেরিল আর অ্যালবেনির মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলাকালে দূত এসে খবর দেয় কর্নওয়াল মারা গেছেন। গনেরিল তখন সন্দেহ করলো রিগ্যান বিধবা এবং তার প্রিয়তম এডমন্ড সেখানেই রয়েছেন। গনেরিল তখন অসওয়াল্ডের হাতে এডমন্ডের জন্য চিঠি পাঠায়। এতে রিগ্যানের সন্দেহ হয় এবং চিঠিটি খুলতে চায় এবং অসওয়াল্ডকে বলে যে সে যেন তার মালকিন কে বলে এডমন্ড, রিগ্যানের স্বামী হিসেবে বেশি উপযুক্ত এবং গ্লস্টারকে প্রাণে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়।
এদিকে ডোভারে মার্শালের উপর সৈন্যবাহিনী পরিচালনার ভার দিয়ে ফ্রান্সের রাজা ফ্রান্সে ফিরে যায়। যুদ্ধশিবিরে অপেক্ষারত কর্ডেলিয়া শুনতে পায় তার বাবা শহরে এসেছেন। তার বাবা অসুস্থ এবং মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তিনি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও তার বাবাকে খুজে সুস্থ করতে চান।
ডোভারের কাছে একটি গ্রামে গ্লস্টার এবং কৃষকের বেশে এডগার পৌছালো। গ্লস্টার আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু এডগারের জন্য সেটা পারলেন না। সেখানে আগাছায় শরীর ঢেকে লিয়ার উপস্থিত হলেন। এবং কেন্টের পরিচিত এক ভদ্রলোক সহ কয়েকজন সঙ্গী এলেন লিয়ারকে কর্ডেলিয়ার কাছে নিয়ে যেতে।কিন্তু লিয়ার সেখান থেকে পালায়।ভদ্রলোকের সঙ্গীরাও তার পিছে ছুটলেন। এরপর এডগার গ্লস্টারকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলো এমন সময় অসওয়াল্ড এলো। এডগার আর অসওয়াল্ডের মধ্যে লড়াই ও অসওয়াল্ড নিহত হলো। মৃত্যুর আগে অসওয়াল্ড তার কবর দিতে বলেছিলো এবং তার কাছে যে চিঠি ছিলো সেটি এডমন্ডকে দিতে বলেছিলো। এডগার চিঠি খুলে দেখলো চিঠিতে গনেরিল, এডমন্ডকে লিখেছে সে যেন অ্যালবেনিকে হত্যা করে।
লিয়ারকে কর্ডেলিয়ার কাছে আনা হলো। কর্ডেলিয়া কেন্টের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। এবং বাবার কাছে আশীর্বাদ চেয়ে জানালেন সে বাবার উপর রেগে নেই।
রিগ্যান এডমন্ডের কাছে জানতে চাইলো সে তার দিদিকে ভালোবাসে কিনা। এডমন্ড জানালো সে শুধু সম্মান করে। তখন রিগ্যান তাকে গনেরিলের সাথে মেলামেশা করতে মানা করলেন। অ্যালবেনি, গনেরিল ও সৈন্যরা শিবিরে এলেন। অ্যালবেনি জানিয়ে দিলেন তিনি শুধু ফ্রান্সের ইংল্যান্ড আক্রমনের খবর পেয়ে এসেছেন তাছাড়া কর্ডেলিয়ার সাথে রাজা লিয়ারের মিলনে বাধা সৃষ্টি করা তার উদ্দেশ্য না। অ্যালবেনির কাছে তখন এডগার এসে তাকে অসওয়াল্ডের কাছে থেকে পাওয়া চিঠিটি দিয়ে বললো যুদ্ধের আগে চিঠিটি খুলতে।
এডমন্ড নিজের বিপদের কথা ভাবে কারণ সে দুইবোনকেই ভালোবাসে বলে কথা দিয়েছে। আবার সে দুইজনের কাওকেই ভালো মনে করেনা। যুদ্ধ শেষ হলে লিয়ার তাকে ক্ষমা করবেব না। এইসব প্রশ্ন তার মনে ঘোরাফেরা করছিলো।
দুই যুদ্ধ শিবিরের মাঝখানে এডগার গ্লস্টারকে বসিয়ে চলে যায় এবং একটু পরই এসে খবর দেয় যুদ্ধে লিয়ার এরে গেছেন। তাকে এবং কর্ডেলিয়াকে বন্দী করা হয়েছে।গ্লস্টার তখন সেখানেই বসে মরে যেতে চাইলে এডগার তাকে ধমক দিয়ে তার হাত ধরে এগিয়ে চলে।
এডমন্ড জনৈক ক্যাপ্টেনকে এক টুকরো কাগজ দিয়ে বলেন সেইমতো কাজ করতে।কাগজে লেখা থাকে কর্ডেলিয়াকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করতে এবং ঝুলিয়ে দিতে যাতে কর্ডেলিয়ার ওপর আত্মহত্যার দায় চাপানো যায়।
অ্যালবেনি প্রথমে এডমন্ডের বীরত্বের প্রশংসা করলেন তারপর বন্দীদের খোজ করলেন। এডমন্ড তখন রাজা ও কর্ডেলিয়াকে বন্দী করার কারণ দর্শাতে থাকেন। এতে অ্যালবেনি রেগে যায়। রিগ্যান আর গনেরিল দুইজনেই এডমন্ডের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু এতে এডমন্ডের জন্য প্রকাশ্যেই রিগ্যান ও গনেরিলের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অ্যালবেনি এডমন্ড ও গনেরিলকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেন।এবার তার নির্দেশে এডগার এলো।এসে এডমন্ডের বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলে দেন। তখন উভয়ের মধ্যে লড়াইয়ে এডমন্ড পড়ে যায়। এডমন্ড তার অপরাধ স্বীকার করে নিলো। এডগার তখন অ্যালবেনিকে সব কথা জানালেন।
এ সময়ে জানা গেলো রিগ্যান এবং গনেরিল দুজনেই নিহত হয়েছেন। গনেরিল মারা গেছে রিগ্যানের ছুড়িতে এবং রিগ্যান মারা গেছে গনেরিলের দেওয়া বিষে। এডমন্ড বললো আমার প্রেমে আমার জন্যই তাদের এ অবস্থা।
এডমন্ডের মন তখন বদলেছে। সে অ্যালবেনিকে তাড়াতাড়ি কাওকে দূর্গে পাঠানোর জন্য বলেন। এবং তার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন রাজা ও কর্ডেলিয়াকে বাচাতে। কিন্তু যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। লিয়ার চিৎকার করতে করতে জানান কর্ডেলিয়া মৃত।
এক দূত এসে খবর দিলো এডমন্ড মারা গেছে। অ্যালবেনি তখন বললো যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমরা এবার ক্ষমতা থেকে সরে বৃদ্ধ রাজাকে পুরো ক্ষমতা অর্পন করবো। কিন্তু কর্ডেলিয়ার শোকে রাজারও মৃত্যু হয়। অ্যালবেনি কেন্ট ও এডগারকে লিয়ারের রাজ্যের শাসনভার গ্রহন করতে বললেন। কিন্তু কেন্ট জানালেন তাকে জরুরী কাজে বাইরে যেতে হবে।অস্বীকার করলেন। এডগার বললেন যিনি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধ তিনিই সবচেয়ে বেশি ভার বহন করেছেন। এখনকার ভার আমাদেরই বহন করতে হবে।
Comments
Post a Comment